বিরোধী দলের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, সিলেট জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন।
বিরোধী দলের দেশব্যাপী আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একই সঙ্গে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে দেশব্যাপী সংগঠনকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিরোধী দলের অতীত দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্যগুলো প্রমাণসহ জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। গতকাল শনিবার শেখ হাসিনা তার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন।
বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকা পাঁচটি জেলা_ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, সিলেট জেলা ও মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। কর্মী-সমর্থকদের হর্ষধ্বনির মধ্যে বিকেল সাড়ে ৪টায় ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।
কার্যালয়ে পৌঁছে শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর ঘোষণা দেন, এখন থেকে প্রতি শনিবার তিনি দলীয় কার্যালয়ে এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করবেন। এ বৈঠকের পর শেখ হাসিনা তার নীলফামারী সফর নিয়ে আসাদুজ্জামান নূর এমপির নেতৃত্বে আসা জেলা নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী|
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নেতারা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিবরণ দিয়ে জানান, বিরোধীদলীয় নেতার দুই পুত্রের দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্ট এবং সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজের মাধ্যমে এতিমদের নামে বিদেশ থেকে টাকা এনে খালেদা জিয়ার আত্মসাৎ, অবৈধভাবে অর্জিত কালো টাকা জরিমানা দিয়ে সাদা করার ঘটনা তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগের প্রমাণ দেয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার দৃষ্টিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাকি খারাপ। অথচ '৭৫-এর পর বর্তমান সময়ের মতো এত শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে কখনও পবিত্র ঈদ, দুর্গাপূজা, বড়দিনসহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না থাকলে উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করল কীভাবে?
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিরোধী দল জনগণকে বিভ্রান্ত ও এ ইস্যুতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করেছি। এ নিয়ে বিরোধী দল যাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সে জন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, তার অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা কী কী বলেছিলেন, তা সবিস্তারে জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ শুধু জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তিনি (খালেদা জিয়া) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মায়াকান্না করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সন্ত্রাসের কারণে ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা না পেলে বিশ্বব্যাংকের অফিস তুলে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিন, মঞ্জুরুল ইমামসহ আওয়ামী লীগের হাজারও নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াত সরকার। তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাই তাদের মুখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা শোভা পায় না। জনগণ তাদের কুকীর্তির কথা সবই জানে।
জনস্বার্থে নয়, যুদ্ধাপরাধী ও খালেদা জিয়ার দুই দুর্নীতিবাজ পুত্রকে রক্ষার জন্যই যে বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলনের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিরোধী দলের নেতিবাচক এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে তাদের সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment